রিয়াদ মাহমুদ সিকদার, কাউখালী প্রতিনিধি।
পিরোজপুরের কাউখালীতে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা বৈরাগী দম্পতি। হেন কৃষি নেই যার চাষ না করছেন ওই দম্পতি। টেনেটুনে চলা সংসারে আজ সাফল্যের বান ডেকেছে। উপজেলার কৃষি বিপ্লবে আজ তারা দৃষ্টান্ত হযে দাড়িযেছেন।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাঙ্গুলী গ্রামের ক্ষুদে কৃষক সুভাষ চন্দ্র বৈরাগী ও সহধর্মিনী পাপড়ি বৈরাগী একটু একটু করে চাষাবাদ করে আজ কৃষি উদ্যোক্তায় পরিনত হযেছেন। পৈত্রিক জমি থেকে মাত্র ৫০ শতাংশ জমি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তাদের চাষে রয়েছে নিজের ৭ বিঘা ও অন্যের কাছ থেকে খাজনায় নেওয়া ২ বিঘা মিলিয়ে বর্তমানে তাদের চাষে ৯ বিঘা সম্পত্তি। ওই জমির দুই বিঘার মধ্যে গড়ে তুলেছেন সবজির ক্ষেত যেখানে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া, মুলা,ওলকপি(শালগম), গাজর, সিমসহ ভিন্ন প্রকারের শীতকালীন ও গ্রীশ্মকালীন সবজি চাষ করেন। পাশাপাশি রয়েছে পুষ্টি বাগান, ফলের বাগান, মাল্টার, আমের বাগান। গত মৌসুমে ৫০ মন মাল্টা আর ১০ মন আম বিক্রি করেছেন তারা। বাকী ৫ বিঘায় ধান চাষের পর সূর্যমুখি, মুগ,খেসারী, ভুট্টা,বাদাম চাষ করেন। তাদের সফলতার খবর গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহায়তা করে থাকেন বলে আমাদের জানান দম্পতি ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে সাংবাদিক বন্ধুদের নিয়ে বৈরাগী বাড়ী গিয়ে জানা যায়, তাদের সফলতার নানা কথা। সুভাষ চন্দ্র বৈরাগী বলেন, শিশু কাল থেকেই লেখা পড়ার ফাঁকে পিতার সাথে জমিতে কাজ করতেন। ৩৫ বছর আগে এসএসসি পাশ করার পর আর লেখা পড়া করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। নেমে পড়ি কৃষি কাজে। একসময় কৃষি অফিসের সহায়তায় পরিকল্পিত কৃষি খামার গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। তিন বছর পর বিয়ে করেন পাপড়ি বৈরাগীকে। সংসারে পাপড়ি বৈরাগীর আগমনের পর দু’জনার পরিশ্রম মিলিয়ে চাষাবাদে মনোযাগী হন। ধীরে ধীরে ক্ষেতের পরিধি বৃদ্ধিসহ আধুনিক চাষাবাদে মনোযোগী হন। এসময় পাশে পান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। তারা জমি তৈরি থেকে মৌসুম অনুযায়ী চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। বীজ, সার দিয়ে সহায়তা করেন। এভাবে চলছে তাদের কৃষি কাজ। ভার্মি কম্পোজ সার তৈরি করে বিক্রি করেন তারা। সবজি চাষের পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন গোটা পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায়।
পাপড়ি বৈরাগী বলেন,৩০ বছর পূর্বে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিবাহের পর স্বামীর ঘরে আসি আমি। স্বামী কঠোর পরিশ্রমী মানুষ বিধায় কৃষি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। স্বামীর পরিশ্রমের পাশাপাশি নিজেও কৃষি কাজে সাহায্য করতেন। এরই মধ্যে তাদের সংসারে একটি মেয়ে একটি ছেলে আসে। স্বামী সুভাষ বৈরাগী যে আয় করেন তা দিয়ে তাদের সংসার কোন মতে চলত। সন্তানদের লেখাপড়ায় তেমন কোন অর্থ ব্যয় করার সামর্থ ছিল না। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি সংসারের উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবজি চাষ শুরু করেন পাপড়ি বৈরাগী। দুজনের পরিশ্রমে আজ তাদের সংসারে সমৃদ্ধি এসেছে। সফল কৃষি উদ্যোক্তায় পরিনত হয়েছেন। বৃদ্ধি পেয়েছে জমির পরিধি। সবজি চাষ করে আয়ের টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে সুনাগরিক গড়ে তুলছেন। মেয়ে অনার্সসহ এমএ পাশ করেছে। তাকে বিয়ে দিয়েছে। একমাত্র ছেলে কাউখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজে বি,এ পড়ে। লেখা পড়ার ফাঁকে পিতা মাতার সাথে ক্ষেতে কাজ করে। বৈরাগী দম্পতির দাবী কঠোর পরিশ্রম আর কৃষি অফিসের সহায়তায় আজ তারা সাবলম্বি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা দাস বলেন, আবাদের জন্য প্রান্তিক চাষীদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ সহ সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়। ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চাষীদের সার্বিক অবস্থা মনিটরিং করা হয়। ফলে শাক সবজির উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈরাগী দম্পতি তাদের পরিশ্রমে আজ তারা কৃষক থেকে কৃষি উদ্যোক্তায় রুপান্তরিত হয়েছেন। তাদের তৈরি ভার্মি কম্পোজ গোটা উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাউখালী এলেই ওই পরিবারের ক্ষেত দেখতে যান। কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী আকবর মহোদয় মাঠ দিবস হিসেবে তাদের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।